মরণ-সুতোয় গাঁথল কে মোর বরণমালা।
...অচিন দেশে এবার আমার যাবার পালা॥
ওয়াহিদুল হক অভিধানতুল্যপ্রজ্ঞাবানেষু--
শুকনো পাতারও একটা ভাষা আছে বেদনাভাবক, ’৩৪-এ গুরুদেবের এ কথন ধৃত হওয়া থেকে শুরু করে এ যাবৎ যতজনই সে ভাষা শুনতে চেয়ে পেতেছেন কান, কমবেশি সবারই মন ছিল দূরে, সকলেই ভেবেছেন স্বভাবত, এ ভাষাও শ্রুত হবে কানে, রোরুদ্য হামলে পড়ে পৌঁছে যাবে মস্তিষ্কে আকুতি
এই শ্রুতি মননের কাজ, সর্বতোভাবে, রানী চন্দ জেনেছেন আগে, সখাকুল সমভিব্যাহারে
জাগ্রত মনস্কামনাপুচ্ছ খসে যায়, একে একে গুরুভাগ ঝরে, হারায় লিরিকখানি তালে-লয়ে মিলবারও আগে
আনাচ-কানাচবাসী বেদনাপ্রকাশ ঘটে চিরকালই কম, কমই এরা নীরব বোধিতে আসে সুদূরবাসীর, কমই হন এরকম অন্তঃকর্ণধারী
কেবল গুটিকয়জনই শুকনো পাতার ভাষা বোঝেন, গুটিকয় ওরকমজনই
Jan 26, 2008
ঝরাপাতা গো
Posted by
মুজিব মেহদী
at
1/26/2008
3
comments
আমি ও অ্যারিস্টটল
‘কবিদের বিষয়ে’ নামে প্রথম গ্রন্থটি লিখেছিলেন ম্যাসিডোনিয়ার রাজপ্রাসাদে বসে ভাববাদী অ্যারিস্টটল, হঠাৎ যা হারিয়ে গিয়েছিল আমার তৃণগুল্মময় আরণ্যমাথায়, হাজার আড়াই বছরেরও পরে, আদ্যন্ত ওটা কুড়িয়ে এনেছি শুধু তোমাদের কথা ভেবে, জেনেছি তোমরা অধীর হয়েছ বেশ, জানতে পেরেছ বলে টিকে থাকা ‘পোয়েটিকস’ হলো মহা-অনুকার্যকলা, আর ‘কবিদের বিষয়ে’ ছিল তারও আগে জ্বলা চূড়ান্ত আলো
এবার আমি লিখছি চেনা বাংলা হরফে, বস্তুবাদীজন, মনে রেখো, ভাস্কোদাগামার সাথে ভারত কিংবা কলম্বাসের সাথে আমেরিকার যেমনটি যোগ, আমার সাথে ‘কবিদের বিষয়ে’রও তেমনি, তুলে আনছি সৃজন-শোভন করে, গড়েপিটে নিতে এক প্রত্নকলাবোধ-- ভেবো কবিতা করার বেলা, যে, সেটা কল্পরঙিন ছায়া, আনন্দ ও অধ্যাস, মঙ্গল ও বেদনা, জীবন ও মিথ্যা এবং মৃত্যু ও সত্যের পরমতাকে ছোঁয়া
পড়ো-- প্লেটো, গুরু মহামহিমের নামে, তর্কে তর্কে যার, এ যাবৎ পৃথিবীতে বহু গলেছে বরফ, বলেছেন এ-ও-- ‘কাব্যকে রাষ্ট্রে স্থান দেয়া গেলে আখেরে হতে পারে সবিশেষ লাভই’, কারণ সুমহান হোমারের তিনি অনুরক্ত ছিলেন, কারণ সক্রেটিসের মৃত্যু তাঁকে ব্যথিত করেছিল
Posted by
মুজিব মেহদী
at
1/26/2008
0
comments
জলসিন্দুকের চাবি
কোটিকাল স্তব্ধ ছিল জলের সিন্দুক, হাট হয়ে খুলে গেল গোপন দরজা, চমকালো যে ছিল যেখানে লঘু মৎস্যকন্যারা, কালে কালে বিদ্রোহ সংবাদে যেভাবে চমকে ওঠে গণবিমুখ সব রাষ্ট্রসংঘ
নাচুনে বাতাসেরা জলময় শুয়ে গেলে জলের শরীরে আসে যৌবন, পঞ্জরাস্থি জেগেওঠা হাঁপানি রোগীর মতো আমাদের বোবা-কালা নদীদের বুকে জাগে কুলুকুলু ধ্বনি, বহুক্রোশ দূর থেকে গয়নানৌকায় চড়ে বেড়াতে আসে চাঁদবউ, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে তার নিশাচর আশাপক্ষীদল, বেধড়ক আলিঙ্গন চেয়ে তারা বাতাসের বস্ত্র ধরে টানাটানি জুড়ে, বলে হবেই হবে
নিচে অদূর অতলে বাজে আদিমান রত্নবেরাদর, তন্দ্রাচ্যুতরা উঠে আনন্দে নেচে বসে লাঞ্ছিত সমীর সকাশে, আসে প্রত্নবিদেরা, আসে সোনারুরা, কাদামাখা ইতিহাসবিদ, তারপর রাতারাতি জাদুঘর
এই যে আমরা, কামনালিপ্তরা, বহুরূপ জাদুঘর ঘুরেছি জীবনে, কর্মের চেয়ে বেশি মুখচ্ছবির প্রতি দেখেছি অকারণ ঝোঁক, মানুষের চেয়ে তার ব্যবহার্যের প্রতি-- এরূপ ঘষাখাওয়া রুচির লক্ষণা-ব্যঞ্জনা দেখে আমরা ঠাহর করি, নিখিলবিশ্বে বুঝি মিথ্যার অধিক কোনো প্রকৃত জাদু নেই
চাবিতর্কে জানা যায়, মাছশিকারিরাই জোসে সাজিয়ে রাখে এই গোপনায়োজন, এরকম গ্যাঁড়াকল ফেঁদে কোথায় কাদের লাভ, কোথায়-যে লোকসান, বুঝেও বুঝি না, এ তথ্য জ্ঞাত হতে আমরা সেবার দলে পুরো শীত কাটিয়েছি শীতলক্ষ্যাতে আর জরিপ করেছি জল নিদারুণ অলীক খায়েশে
Posted by
মুজিব মেহদী
at
1/26/2008
0
comments
জলযাত্রা
ভোরের বৃষ্টি ধুয়ে দিয়ে গেল গত দিনের ধুলো, গাছপালা সড়ক ও জনপথ, প্রাতস্নানা এই শিশু দিনটিকে পকেটে গুটিয়ে নেই রুমালের মতো, আমার তো যেতে হবে দূর-বহুদূরে
শহরের ভেজা সব কাকেদেরও আগে, নিজস্ব পাখা নেড়ে হোগলাবনের ভিড়ে, মাসকাটা-লতা বেয়ে আমাদের লঞ্চ যাবে পাতাদের হাট, সুপারিবনের বেশ গভীরপুরীতে, তার টংঘরে, কয়েকটি চাঁদরাত চেখে যেতে চাই আমি পুঁথি আর সুরে সুরে লোককবিতার
মাঝপথে তড়িঘড়ি রুমাল পরশে আমি মুছে নেই পিচুটি কান্তির, তারপর দিনকে আদর দিয়ে পৌঁছে দেই অন্ধকার রাত্রিসদরে
দিন ও রাত্রির এক চিরকেলে গোধূলিমোহনায় দেখি নাতিদীর্ঘ এবারের এ জলযাত্রায়, আকাশ চলেছে তার গনাগোষ্ঠীসহ
Posted by
মুজিব মেহদী
at
1/26/2008
0
comments
ভ্রমণে পাওয়া জলস্তোত্র
ক্ষমতা ও অক্ষমতার কণ্ঠস্বরের পার্থক্যটি নদী ও পুকুরের মতো, একটি উন্মোচনের মুক্ত গান গায়, আরেকটি বদ্ধ পতন যন্ত্রণায় কাঁদে, একটি উদ্ধত স্পর্ধা, আরেকটি বিনীত দয়া
ক্ষমতা ক্ষমতাকে সর্বদা উপভোগ করে, আর অক্ষমতা অক্ষমতাকে নিয়ে চিরবিব্রত
আমরা না-সক্ষম না-অক্ষম যারা মধ্যিখানে থাকি, তাদের মতো এত নিম্নমানের তৃতীয় শ্রেণি আর হয় না, ক্ষমতার লেজে পা দিয়ে আমরা অক্ষমতার গহ্বরে কেবলই হুমড়ি খেয়ে পড়ি
২.
আমরা যারা পারা দেয়া একমুখী কাচের ভেতরে থেকে ঘুরেফিরে নিজেকেই দেখি, রহস্য তাদের গিলে ফেলে, পৃথিবীর-- কূপের মণ্ডূক হয়ে ব্রহ্মাণ্ডকে ছোট ভেবে নিজেকেই এত করে ছোট করি যে ঘাসের রঙ কেন সাদাও হয় সেটুকু জেনেবুঝেও নিজের পাণ্ডুতা তেমন ঠাহরে পাই না
গতকালের আমির সাথে আজকের আমির মিল খুঁজে পেয়েও শুধু সময় এগোলো বলে কিছুদূর এগিয়েছি ভাবি, একটি পাখি কেন ডানা মেলে নেই পারা দেয়া কাচে, নিজের মুখের স্থলে, ধাঁধানো বিভ্রমে পড়ে, সে কথা কস্মিনে একটুও ভাবি না
আয়নাবিভ্রমে নিজের কাছে নাজেহাল হতে হতে আমরা ভাবছি-- জগৎটা এ জীবনে সম্মান দিল না
Posted by
মুজিব মেহদী
at
1/26/2008
0
comments
ফেইসবুক প্রতীক
ওয়েবগ্রুপ
|
কবিতাকথা |
Visit this group |